যশোর জেলার দর্শনীয় স্থান

যশোর জেলার দর্শনীয় স্থান

যশোর বাংলাদেশের প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী অন্যতম একটি জেলা।  বাংলাদেশের প্রথম শত্রুমুক্ত জেলা ও প্রথম ডিজিটাল জেলা নামে পরিচিতি লাভ করেছে। ভৈরব নদের তীরে অবস্থিত এই যশোরকে নানান পরিচিতিতে সমৃদ্ধশালী করেছে। বাংলাদেশের ফুলের রাজধানী বলা হয় গদখালীকে যা যশোর জেলার ঝিকরগাছা উপজেলায় অবস্থিত। মাইকেল মধূসূদন দত্তের এই যশোর জেলার অন্যতম ঐতিহ্যগুলো হলো খেজুরের গুঁড় ও ফুল যা সারা বাংলাদেশে খ্যতি অর্জন করেছে।

 যশোর কালেক্টরেট ভবনঃ

যশোর জেলার দর্শনীয় স্থান

বৃটিশ আমলে ১৭৮৬ সালে যশোরে কালেক্টরেট ভবন প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রাচীনতম এই ভবনটি যশোর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। মূলত বৃটিশদ আমলে জমির খাজনা সংক্রান্ত কার্যক্রমগুলো এখানে সম্পাদন করা হতো। এছাড়াও ভূমি রাজস্ব আদায়ের পাশাপাশি কালেক্টরের অন্যতম প্রধান কাজ ছিল ঋণখেলাপীদের সম্পদ বিক্রয়। প্রাচীন এই ভবনটি সংস্কারের মাধ্যমে প্রাচীন ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। এই ভবনের পিছনে চারিদিকে সৌন্দর্য্য বর্ধন করে বাঁধানো একটি পুকুর রয়েছে। পুকুরের মধ্যে নানান প্রজাতির মাছ ও পদ্মফুলের সমহর রয়েছে। যা দেখার জন্য দূর দূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা প্রতিদিন বিকেল ভীড় করেন।


যশোর পৌর পার্কঃ

যশোর জেলার দর্শনীয় স্থান

যশোর শহরের অন্যতম আরেকটি দর্শনীয় স্থান হলো যশোর পৌর পার্ক।  প্রায় ৫লক্ষ মানুষের বসবাসের এই শহরের মানুষের চিত্তবিনোদনের জন্য এটি একমাত্র পার্ক। এই পার্কে রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক স্মৃতি চিহ্ন । ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজ হাতে শহীদ মশিউর রহমান স্মরণে একটি স্মৃতি ফলক স্থাপন করেছিলেন এই পার্কে।  সেই স্মৃতি ফলক ও নতুনভাবে সংস্কার করা হয়েছে। পার্কে নতুন ভাবে করা হয়েছে আকর্ষণীয় পানির ফোয়ারা, মানুষের চলাচলের জন্য রাস্তা নির্মাণ, বিশ্রামের জন্য বসার স্থান করা হয়েছে। এছাড়াও বাচ্চাদের জন্য রয়েছে দোলনা সহ নানা খেলনা সামগ্রী। এখানে দর্শনার্থীদের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে একটি পাবলিক টয়লেট।  এছাড়া পার্কটিতে রয়েছে দেশি বিদেশী নানা জাতের আকর্ষণীয় গাছ। পার্কের মধ্যে দুটি গভীর পুকুর রয়েছে। তবে পুকুর গভীর হওয়ার কারণে দর্শনার্থীদের  নিরাপত্তার স্বার্থে পুকুরে নেমে গোসল করা নিষিদ্ধ। পুকুরটিতে বছরের নির্দিষ্ট সময়ে টিকিট কেটে মাছ ধরার সুবিধা রয়েছে। এই পার্কটিতে প্রবেশের জন্য কোন ধরনের টিকিটের প্রয়োজন হয়না।


যশোর আইটি পার্ক ও রিসোর্টঃ

যশোর জেলার দর্শনীয় স্থান

যশোর শহরের শংকরপুর এলাকায় অবস্থিত দেশের দক্ষিণ অঞ্চলের একমাত্র আইটি পার্ক যা শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক নামেও পরিচিত। ২০১৭ সালের ১০ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে দেশের প্রথম আইটি পার্ক। সুবিশাল সৌন্দর্য্যমন্ডিত ভবনের সামনে রয়েছে ফুলেল সজ্জিত সুন্দর একটি মাঠ। এখানে বাংলাদেশের একটি ডাটা সেন্টারও রয়েছে। এই পার্কে বিদেশী অতিথীদের রাত্রিযাপন করার জন্য তিন তারকা মানের হোটেল ও ক্যাফেটেরিয়া রয়েছে । যা বর্তমানে সাধারণ দর্শনার্থীরা নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে নিরাপদে রাত্রিযাপন করতে পারেন। এছাড়াও পার্কটিতে রয়েছে একটি পার্টি সেন্টার। বিয়ে, সভা, সেমিনার সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য এই পার্টি  সেন্টার ভাড়া দেওয়া হয়।


 বিনোদিয়া ফ্যামিলি পার্ক ও মিনি চিড়িয়াখানাঃ

যশোর জেলার দর্শনীয় স্থান

যশোর শহরের পালবাড়ি মোড় থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে শানতলায় যশোর ক্যান্টনমেন্টের ভিতরে অবস্থিত বিনোদিয়া ফ্যামিলি পার্ক ও মিনি চিড়িয়াখানা। সাবেক সেনা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফয়েজ আহমেদ ১৯৯৮ সালে বিনোদিয়া ফ্যামিলি পার্ক তৈরি করেন। যা বর্তমানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হচ্ছে। পার্কটির অভ্যন্তরে রয়েছে কয়েকটি মাঠ, এক পাশে রয়েছে লেকে নৌকা দিয়ে ভ্রমনের সুযোগ এবং অন্য পাশে রয়েছে মিনি চিড়িয়াখানা। এখানে বানর, হনুমান, উটপাখি, অজগার সাপ, হরিণ, ময়ূর সহ বিভিন্ন প্রজাতির পশু ও পাখি রয়েছে। ভ্রমন পিপাষু মানুষের জন্য অবসর সময় কাটানোর জন্য এই পার্কটি অসাধারণ। এছাড়াও বিভিন্ন স্কুল, কলেজের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা সফরের জন্য স্পট ভাড়া করা, বিভিন্ন সংগঠনের পুনর্মিলনী সহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজনের ব্যবস্থাও এই পার্কটিতে রয়েছে।  এটির অভ্যন্তরে একটি মসজিদ রয়েছে। এই পার্কটিতে প্রবেশ করতে হলে আপনাকে ২০-৫০ টাকার বিনিময়ে টিকেট কেটে প্রবেশ করতে হবে।


যশোর অভ্যন্তরীন বিমান বন্দরঃ

যশোর জেলার দর্শনীয় স্থান

যশোর শহরের নিকটবর্তী অন্যতম দর্শনীয় স্থান হলো যশোর অভ্যন্তরীন বিমান বন্দর।  ১৯৪২ সালে যুক্তরাজ্য দ্বিতীয়  বিশ্বযুদ্ধের সময় এই বিমান ঘাঁটিটি নির্মাণ করা হয়। ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত এই বিমান বন্দরটি চালু ছিল। পরবর্তীতে ১৯৫০ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও বিমান  বাহিনীর ঘাঁটি স্থাপন করে। ১৯৬০ সালে যশোর পূর্ণাঙ্গ অভ্যন্তরীন বিমানবন্দর হিসেবে চালু করা হয়। বর্তমানে এটি বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একমাত্র প্রশিক্ষণ ঘাঁটি বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান বিমান ঘাঁটি হিসেবে ও অভ্যন্তরীন বিমান বন্দর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রতিদিন ঢাকা-যশোর রুটে বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, নভোএয়ার ও ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স এর ফ্লাইট নিয়মিত চলাচল করে।

যশোর বিমান বন্দরের নতুন একটি বহির্গমন টার্মিনাল নির্মাণ করা হয়েছে। যশোর বিমান বন্দরের চারপাশে কাঁটা তারের বেড়া ও প্রাচীর থাকায় সহজে বিমান ওঠা নামার দৃশ্য দেখার জন্য শত শত দর্শনার্থীরা এখানে ঘুরতে আসে। সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য টিকিট এর বিনিময়ে এটির অভ্যন্তরে পুরাতন মডেলের অব্যবহৃত বিমান দেখার সুযোগ রয়েছে।


যশোর বিমান বাহিনী যাদুঘরঃ

যশোর জেলার দর্শনীয় স্থান

যশোর শহর থেকে ৫কিঃমি দূরে যশোর অভ্যন্তরীন বিমানবন্দর এর ঠিক বিপরীত পাশে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী গড়ে তুলেছে বিমান বাহিনী যাদুঘর। এই যাদুঘর সাধারণ সকল দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত। কোলাহল মুক্ত প্রাকৃতিক পরিবেশের এই যাদুঘরের অভ্যন্তরের রয়েছে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর অব্যবহৃত পরিত্যক্ত প্রশিক্ষণ বিমান। যা দেখে ক্ষুদে দর্শনার্থীদের দারুন আনন্দ উপভোগ করেন। যাদুঘরের অভ্যন্তরে রয়েছে নাগরদোলা, দোলনা, নৌকা সহ বিভিন্ন বিনোদন উপকরণ।



ক্যাফে বিল হরিণাঃ

যশোর জেলার দর্শনীয় স্থান

যশোর শহরস্থ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে মুড়লী রোডের মায়া ফিলিং স্টেশন থেকে ডানে পিচের রোড ধরে কিছুদূর যেতেই চোখে পড়বে হরিনার বিলের মধ্যে বড় পুকুরের ওপরে নির্মিত কাঠ আর গোলপাতার ছাউনি দিয়ে তৈরি রেষ্টুরেন্টনিরিবিলি মনোরম এবং গ্রাম্য পরিবেশে পরিবার নিয়ে কিছুটা সময় কাটানোর জন্য ঘুরে আসতে পারেন ক্যাফে বিল হরিনা রেষ্টেুরেন্টে। এছাড়াও পুকুরটিতে নৌকা দিয়ে ঘুরে আনন্দ উপভোগ করতে পারেন। স্থানটি হরিণার বিল নামেও পরিচিতি।   


জেস গার্ডেন পার্কঃ

যশোর শহরের নিউ মার্কেট হতে মাত্র ২ কিঃ মিঃ দূরে বাহাদুরপুর স্কুলের বিপরীত পার্শ্বে অবস্থিত শহরের কোলাহল মুক্ত নিরিবীলি গ্রামীন পরিবেশে সবুজের সমারোহ ও আধুনিক সুযোগ সুবিধা সংবলিত একটি আদর্শ পিকনিক স্পট “জেস গার্ডেন পার্ক” পিকনিক স্পট । ১৯৯২ সালে মরহুম এ. এস. এম হাবিবুল হক চুনি প্রায় ১২ একর জমির উপর পার্কটি প্রতিষ্ঠা করেন। যা বর্তমানে আধুকায়ন করে সুসজ্জিত করা হয়েছে। পার্কটির অভ্যন্তরে রয়েছে সুইমিং পুল, বিভিন্ন ধরনের বিশাল আকারের গাছে ভরপুর, দোলনা, হাসের পিঠে শিশুদের পানির ওপরে ঘুরা খেলনা, কৃত্রিম ভাবে তৈরি বনমানুষ, সিংহ, বাঘ, হাতি, ক্যাঙ্গারু, ঘোড়া, বক সহ নানান ধরনের প্রাণি। যা দেখে ভ্রমণ পিপাষুরা ছবি তোলা সহ দেখে আনন্দ উপভোগ করেন। পার্কটিতে আরও দেখতে পাবেন চেয়ার চরকি, নাগরদোলা, ছোট্ট ট্রেন, ঘোড়া চরকি প্রভৃতি । প্রতিটি রাইডে চড়ার জন্য আলাদা টিকিটের ব্যবস্থা রয়েছে।

যশোর জেলার দর্শনীয় স্থান

পার্কটির ভিতরের পকুরের ওপর রয়েছে একটি সুন্দর সেতু। সেতুর উপর দাড়িয়ে দৃশ্যগুলো সুন্দরভাবে উপভোগ করা যায়। এছাড়াও পানিতে প্যাডেল বোটে চড়ে দর্শনার্থীদের ঘুরে বেড়ানোর দৃশ্য দেখা যাবে। সেতু পার হয়ে পুকুরের পূর্বে পাশে দেখবেন মিনি চিড়িয়াখানা। সেখানে রয়েছে হরিণ, কুমির, সাপ, খরগোশ, ময়ূর, সহ নানান প্রজাতির পশু ও পাখি। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনার্থীরা এখানে ঘুরতে আসেন। 

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post