জন্ম নিবন্ধণ কিঃ
জন্ম নিবন্ধন হলো জন্মের পরে নাগরিকের প্রথম রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি। শিশু
রূপে এ রাষ্ট্রের একজন ভবিষ্যৎ নাগরিক হয়ে আসা ব্যক্তিকে স্বীকৃত নাগরিকের মর্যাদা ও সকল সুযোগ-সুবিধা দেয়ার একটি
ব্যবস্থা হলো জন্ম নিবন্ধণ। ২০০৪ সালে সরকার জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন প্রণয়ন
করে। এটির মাধ্যমে একজন মানুষের নাম, লিঙ্গ, জন্মের তারিখ ও স্থান, পিতা-মাতার নাম, জাতীয়তা এবং স্থায়ী ঠিকানা
নির্ধারিত নিবন্ধক কর্তৃক রেজিস্টারে লেখা বা কম্পিউটারে এন্ট্রি প্রদান এবং জন্ম
সনদ প্রদান করা। জন্ম নিবন্ধন আইনের বিধান অনুযায়ী এই বিধি লংঘনকারী নিবন্ধক বা
ব্যক্তি অনধিক ৫০০ (পাঁচশত টাকা) অথবা অনধিক দুইমাস বিনাশ্রম কারাদন্ডে বা উভয়
দন্ডে দন্ডিত হতে পারেন।
জন্ম নিবন্ধণ
কেন প্রয়োজনঃ
আমাদের দেশে নানা কাজে জন্ম নিবন্ধন প্রয়োজন হয়। উদাহরণ হিসে্বে বলা যায়-
· বয়স প্রমাণের ক্ষেত্রে
· শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা স্কুলে ভর্তি
· পাসপোর্ট ইস্যু
· বিবাহ নিবন্ধন
· জমি রেজিষ্ট্রেশন
· বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ
· শিশু শ্রম প্রতিরোধ
· ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু
· ব্যাংক একাউন্ট খোলা
· জাতীয় পরিচয়পত্র প্রাপ্তি ইত্যাদি
জন্ম নিবন্ধনের জন্য কোথায় আবেদন করবেন:
·
স্থায়ী বা বর্তমান ঠিকানায় বসবাসরত ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে।
·
পৌরসভা
·
সিটি কর্পোরেশন অফিস
·
সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন ওয়ার্ড কমিশনারের অফিস থেকে জন্ম নিবন্ধন করতে
পারবেন।
শিশু জন্মের কত দিনের মধ্যে জন্ম নিবন্ধন করতে হয় এবং আবেদন ফি কত?
সাধরণত শিশু জন্মের
৪৫ দিনের মধ্যে জন্ম নিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক করেছে সরকার।
শিশু জন্মের ২ বছরের মধ্যে জন্ম নিবন্ধন না করালে পিতা-মাতার জন্য আইনে জরিমানার বিধান আছে।
জন্ম নিবন্ধন ফি
সংক্রান্ত তথ্যঃ
শিশুর বয়সের উপর ভিত্তি করে জন্ম নিবন্ধন ফি পরিবর্তিত হয় যেমন:
-৪৫ দিনের কম বয়সী শিশুর জন্ম নিবন্ধণ ফ্রী
-৪৫দিন থেকে ৫ বছর হলে ২৫ টাকা
-০৫ বছরের বেশি হলে ৫০টাকা অর্থাৎ প্রতি এক বছর বয়সের জন্য ১০ টাকা হারে ফি নেওয়া হয়।
জন্ম নিবন্ধণ সংশোধণ ফি কত টাকাঃ
অনেক সময় আবেদন করার পরে জন্ম নিবন্ধণ
সংশোধন করা প্রয়োজন হতে পারে। সে ক্ষেত্রে জন্ম নিবন্ধনে শুধুমাত্র
জন্মতারিখ সংশোধন করতে ১০০ টাকা ফি দিতে হয়। এছাড়াও জন্মতারিখ ব্যতীত অন্যান্য তথ্য যেমন নাম, বাবা-মায়ের নাম ও ঠিকানা সংশোধনের জন্য ৫০ টাকা ফি প্রদান করতে হয়।
জন্ম নিবন্ধনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রঃ
· শিশু যদি কোন হাসপাতাল বা ক্লিনিকে
জন্মগ্রহণ করে থাকে তবে সেখানকার ছাড়পত্র অথবা সার্টিফিকেট।
· শিশুর
পিতা-মাতার জতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি অথবা পিতা-মাতার অনলাইন জন্ম নিবন্ধন (বাংলা ও
ইংরেজি উভয়ই কপি)।
· হোল্ডিং
ট্যাক্স পরিশোধের রশিদের ফটোকপি অথবা ইউপি ট্যাক্স পরিশোধের রশিদের ফটোকপি।
· আপনার
ঠিকানার সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড মেম্বার, ওয়ার্ড কমিশনার এর
প্রত্যয়নপত্র।
· আবেদনকারীর
(শিশুর) ১ পাসপোর্ট সাইজ কপি ছবি। তবে সদ্য জন্ম নেওয়া শিশু হলে অনেক সময় ছবির প্রয়োজন হয় না।
জন্ম নিবন্ধনের জন্য কোথায় যাবেন:
জন্ম নিবন্ধনের জন্য আপনি সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের উদোক্তা কেন্দ্রে গিয়ে অনলাইনে আবেদন সম্পন্ন করতে পারবেন। অথবা আপনি চাইলে নিজে বাসায় বসে অনলাইনের মাধ্যমে জন্মনিবন্ধণ আবেদনপত্র পুরণ করতে পারবেন।নিজে অনলাইনে আবেদন করার জন্য https://bdris.gov.bd ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে ধাপে ধাপে সকল তথ্য প্রদান করে সাবমিট করলে আপনার আবেদন সম্পন্ন হবে। এর পর প্রিন্টেড কপি সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান/কমিশনার/মেয়র এর স্বাক্ষর করিয়ে কপিটি আপনার সংরক্ষণে রাখুন। মনে রাখবেন বাংলা ও ইংরেজী উভয় মাধ্যমে জন্ম নিবন্ধনের কপি নেওয়ায় উত্তম।পরবর্তীতে বাংলা এবং ইংরেজি বানানের ক্ষেত্রে কোথাও সমস্যা হয়না।
জন্ম নিবন্ধন যাচাই করার নিয়মঃ
সাধারণত জন্ম নিবন্ধনের
সময় ১৭ ডিজিটের একটি নাম্বার দেওয়া হয়। সেই নাম্বার ও জন্ম তারিখ দিয়ে জন্ম নিবন্ধন
সঠিক আছে কি না তা অনলাইনে যাচাই করা যায়। জন্ম নিবন্ধণ যাচাই করার জন্য নিম্নোক্ত
ধাপগুলো অনুসরণে করে খুব সহজে আপনি জন্ম নিবন্ধণ অনলাইনে দেখতে পারবেন এবং প্রয়োজনে
প্রিন্ট করে সংরক্ষণ করতে পারবেন।
ধাপ-০১, প্রথমে সরকারি ওয়েরব সাইটে https://everify.bdris.gov.bd
প্রবেশ করুন।
ধাপ-০২, উপরে দেখানো ছবির প্রথম ঘরে আপনার
নির্ধারিত ১৭ ডিজিটের জন্ম নিবন্ধণ নাম্বার লিখুন।
ধাপ-০৩, আপনার জন্ম তারিখটি(YYYY-MM-DD)
লিখুন।
ধাপ-০৪, আপনার সামনে প্রদর্শিত সংখ্যাটি
যোগ করে The answer is এর ঘরে লিখুন।
ধাপ-০৫, সবগুলো ঘরের তথ্য ঠিক থাকলে সার্স
এ ক্লিক করলে আপনার জন্ম নিবন্ধরে যাবতীয় তথ্য দেখতে পাবেন।